সুন্দর আমাদের এ পৃথিবী। এখানে আমরা থাকি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই সুন্দর। সুন্দর আর সুন্দর। এই সুন্দরের নানা রূপ। এখানে রয়েছে নানা ধরনের গাছ-লতা-পাতা। রয়েছে জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ। পৃথিবীর কোথাও রয়েছে বনভূমি। কোথাও উঁচু পাহাড়-পর্বত। কোথাও সমভূমি। কোথাও বিশাল জলরাশি, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর। কোথাও রয়েছে সবুজ শস্যক্ষেত্র। আবার কোথাও বালুকাময় ধু-ধু মরুভূমি। গাছে-গাছে জানা-অজানা ফুল-ফল। ডালে-ডালে পাখি। শোনা যায় পাখির কল-কাকলি। আমাদের মাথার উপরে রয়েছে সুনীল আকাশ। যার কোনো সীমা নেই। আকাশে দেখা যায় চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এ পৃথিবী। এ সৌন্দর্যময় প্রকৃতি একদিনে হয়নি। এ পৃথিবীও হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আজকের এ সুন্দর পৃথিবী। এ সমস্ত সৃষ্টির মূলে রয়েছেন একজন মহান স্রষ্টা।
স্রষ্টার রয়েছে অনেক নাম। বিভিন্ন ধর্মে স্রষ্টাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। হিন্দুধর্মে স্রষ্টাকে ঈশ্বর বলা হয়। পরমেশ্বর, ব্রহ্ম, পরমব্রহ্ম, পরমাত্মা, হরি, ভগবান প্রভৃতি নামেও তাঁকে ডাকা হয়। খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা তাঁকে বলে ঈশ্বর বা গড। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা তাঁকে আল্লাহ নামে ডাকে। বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের অনুশাসন মেনে চলে।
বিভিন্ন ভাষায় ঈশ্বরের বিভিন্ন নাম রয়েছে। ঈশ্বরকে ইংরেজিতে গড বলা হয়। আরবিতে বলা হয় আল্লাহ। ফারসি ভাষায় বলা হয় খোদা।
একই জলকে যেমন কেউ বলে পানি, কেউ বলে ওয়াটার, তেমনি একই ঈশ্বরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
১. প্রাকৃতিক _______ পরিপূর্ণ এই পৃথিবী।
২. আকাশে দেখা যায় _____ , গ্রহ-নক্ষত্র।
৩. হিন্দুধর্মে স্রষ্টাকে _____ বলা হয়।
উপরের ছবিটি দেখে তোমরা শ্রেণিতে একটি সৌরজগৎ সৃষ্টি করো। তোমাদের মধ্যে একজন বন্ধু সূর্য ও অন্যরা এক একজন গ্রহ হবে। ছবির মতো করে যার যার জায়গায় দাঁড়াও। যে যে-গ্রহের ভূমিকায় অভিনয় করবে সেই গ্রহের নাম বলো।
ঈশ্বর সকল শক্তির অধিকারী। তিনি জগতের সকল জায়গায় রয়েছেন। তিনি শুধু পৃথিবীই সৃষ্টি করেননি। পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর সৃষ্টি। পৃথিবীর বাইরেও রয়েছে বিশাল এক জগৎ। একে মহাবিশ্ব বলা হয়। সে সবের স্রষ্টাও তিনি।
প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে আর সন্ধ্যায় অন্ত যায়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে। শুধু পৃথিবী নয়, ঘুরছে অনেক গ্রহ-উপগ্রহ। এসব নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। এ মহাবিশ্বের সবকিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এ নিয়মেই দিন ও রাত হয়। ঋতুর পরিবর্তন হয়। ঘটে সব প্রাকৃতিক ঘটনা। এসব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।
সমগ্র সৃষ্টিই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। আমাদের জন্ম-মৃত্যু তাঁরই দান। অসীম তাঁর ক্ষমতা। তাঁর ক্ষমতার বাইরে কিছু নেই। অনেক কিছু আমাদের চোখে পড়ে না। অনেক কিছু এখনও আমরা ভাবতে পারিনি। ঈশ্বর সে সবেরও স্রষ্টা। তিনি সৃষ্টি করেন। তিনি পালন করেন। আবার তিনিই ধ্বংস করেন।
এভাবেই তিনি তাঁর শক্তি দিয়ে মহাবিশ্বকে ধারণ করেন।
১. পৃথিবী সৌরজগতের _____ ।
২. সমগ্র ______ তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।
৩. আবার তিনিই ______ করেন।
ঈশ্বর সকল জীবকে সৃষ্টি করেছেন। তাই ঈশ্বর ও জীবের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তাঁকে আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু সকল জীবের মধ্যে তিনি আছেন। আছেন তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্যে। তিনি আছেন বলেই আমাদের জীবন আছে। প্রকৃতি তাঁর সৃষ্টি। প্রকৃতিতে আছে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর মতো সবকিছু। প্রকৃতিকে নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। এভাবে তিনি আমাদের লালন-পালন করেন। তাই আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করব। বিশ্বাস করব। আমরা তাঁকে ভালোবাসব। ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য আমরা তাঁকে ভক্তি করব।
ঈশ্বর আত্মারূপে জীবের মধ্যে অবস্থান করেন। এজন্য আমরা জীবকে ভালোবাসব। কারণ জীবকে ভালোবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-
জীবে প্রেম করে যেই জন,
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
তাই আমরা কোনো জীবকেই অবহেলা করব না। জীবকে অবহেলা করলে ঈশ্বরকে অবহেলা করা হয়। সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়। ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়। এতে তিনি সন্তুষ্ট হন। তিনি আমাদের মঙ্গল করেন। এছাড়া উপাসনা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়েও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পারি। ভালোবাসতে পারি। তাই আমরা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করব।
১. সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন দাও।
জীবে প্রেম করে যেই জন,
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।- কথাটি বলেছেন
(ক) লোকনাথ ব্রহ্মচারী (খ) প্রভু জগদ্বন্ধু
(গ) মা সারদা দেবী (ঘ) স্বামী বিবেকানন্দ
ঈশ্বর আছেন। কিন্তু কীভাবে আমরা তাঁকে জানব? কীভাবে তাঁকে উপলব্ধি করব? ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার জন্য তাঁর উপাসনা করতে হবে। উপাসনার অর্থ হলো ঈশ্বরকে স্মরণ করা। একমনে তাঁকে ডাকা। তাঁর আরাধনা করা। তাঁর গুণকীর্তন, স্তব-স্তুতি, পূজা, ধ্যান-জপ ইত্যাদির মাধ্যমে উপাসনা করা। দয়াময়, কৃপাময়, করুণাময় ইত্যাদি ঈশ্বরের গুণবাচক নাম। বারবার এই নামগুলো উচ্চারণ করব। সুর করে তাঁর নামগান করব। এভাবে উপাসনা করা যেতে পারে। আবার নীরবেও উপাসনা করা যায়। ঈশ্বরকে নিরাকার বা সাকার দুভাবেই উপাসনা করা যায়। সাকার উপাসনায় দেব-দেবীর প্রতিমা বা ছবির সামনে বসতে হয়। পূজা করতে হয়। যজ্ঞ করতে হয়। নিরাকার উপাসনা জপ, ধ্যান, গুণকীর্তনের মাধ্যমে করা হয়। উপাসনা একটি নিত্যকর্ম। প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় উপাসনা করতে হয়। উপাসনা করলে
দেহ-মন পবিত্র হয়। উপাসনার সময় আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করি। তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে সোজা হয়ে উপাসনায় বসতে হয়। উপাসনায় বিশেষ আসনে বসতে হয়। যেমন পদ্মাসন, সুখাসন। নিয়মিত আসন অভ্যাসে শরীর সুস্থ থাকে।
বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা-
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি,
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা-
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
উপাসনার একটি দিক প্রার্থনা। প্রার্থনা হলো ঈশ্বরের কাছে কিছু চাওয়া। ঈশ্বর মহান। আমরা তাঁর সৃষ্টি। প্রার্থনার সময় আমাদের এরূপ মনোভাব থাকা উচিত। ভালো হওয়ার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হয়। বলতে হবে- “হে ঈশ্বর! তুমি আমাকে ভালো পথে নিয়ে যাও। কল্যাণের পথ দেখাও। আলোর পথ দেখাও। তুমি সকল জীবের মঙ্গল করো।"
প্রার্থনা একা করা যায়। সমবেতভাবে করা যায়। নীরবে করা যায়। সরবে করা যায়। সমবেত প্রার্থনায় সবাই একত্রিত হয়। এতে সবার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রার্থনায় ধীর-স্থির হয়ে বসতে হয়। হাত জোড় করে ঈশ্বরকে ডাকতে হয়। ঈশ্বরের গুণকীর্তন করতে হয়। নিজের ভালো চাইতে হয়। অন্যের ভালো চাইতে হয়। সকল জীবের কল্যাণ কামনা করতে হয়। ঈশ্বর যেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে ভালো রাখেন। সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা করতে হয়। কোনো শুভ কাজের শুরুতে কিংবা বিপদে পড়লে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয়। এছাড়া যে কোনো অবস্থায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা যায়।
উপাসনা ও প্রার্থনার মাধ্যমে মনোযোগ বাড়ে। আমাদের দেহ-মন ভালো থাকে। শরীর সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত উপাসনা ও প্রার্থনা করব।
উপাসনা ও প্রার্থনা ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। উপাসনা ও প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা সৎ ও ধার্মিক হতে পারি। ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি। তাই উপাসনা ও প্রার্থনার গুরুত্ব অপরিসীম।